জানা যায়, সর্বোচ্চ আদালতের রায় বিবেচনা করে সরকার সম্প্রতি বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্যানেলভুক্তদের নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কাজও শুরু করেছে।
বর্তমানে সারাদেশে এ ধরনের প্যানেলভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ৩২ হাজার। এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন তারা। হাইকোর্টে প্রায় পাঁচ হাজার রেজিস্টার্ড শিক্ষকদের জন্য ৩২টি রিট আবেদনের পক্ষে লড়াই করেছেন আইনজীবী ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া। তিনি বলেন, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ শিক্ষকদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। সরকার এই রায় বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ। প্রার্থীরা নিয়োগ পেলে তাদের দীর্ঘ হয়রানির অবসান ঘটবে বলে মনে করি।
প্যানেলভুক্ত শিক্ষক ও রিটকারী আশরাফুল আলম বলেন, এটা অবশ্যই খুশির সংবাদ। আমারা বিশ্বাসই করতে পারেনি চাকরিটা হবে। বর্তমানে চাকরি হওয়ায় শুধু আমি নই, প্যানেলভুক্ত আমাদের সবার পরিবারও খুশি।
সূত্র জানায়, ওইসব শিক্ষকদের শূন্য পদে নিয়োগ দিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হচ্ছে।
২০১০ সালের ১১ এপ্রিল রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শূন্য পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। উপজেলা ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তির ৩ নম্বর শর্তে উল্লেখ করা হয়। এ বিজ্ঞপ্তির ওপর ভিত্তি করে ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪২ হাজার ৬১১ জনকে নিয়োগের জন্য প্যানেল তৈরি করা হয়। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর এক পরিপত্র জারি করে ইউনিয়ন ভিত্তিক নিয়োগের কথা জানায়। সে সময় ১০ হাজার ৪৯৭ জনকে নিয়োগও দেয় সরকার। এতে মেধা তালিকার প্রথম দিকে থেকেও অনেকে নিয়োগ বঞ্চিত হন। পরে ২০১৩ সালে সব রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। এরপর নিয়োগ দেয়া বন্ধ করে সরকার। ফলে হতাশায় পড়েন চাকরি প্রত্যাশী প্যানেলভুক্তরা।
এদিকে, নিয়োগ বঞ্চিত ও প্যানেলভুক্ত সদস্যদরা নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হাইকোর্টে পৃথক পৃথক রিট করেন। এর মধ্যে সবার আগে করা একটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৮ জুন রিট আবেদনকারী ১০ জনকে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়ে রায় দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
ওই রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাদের নিয়োগ দিতে বলা হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্যরা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। ২০১৫ সালের ৭ মে তা খারিজ করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ। পরে অধিদফতরের করা রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেয়া হয়।
সব আইনি লড়াইয়ে হেরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সম্প্রতি ওই ১০ জনকে নিয়োগ দেয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর একইভাবে প্যানেলভুক্ত প্রায় ১০ হাজার জনের নিয়োগ প্রশ্নে রায় দেন হাইকোর্ট। মোট ৩৬৭টি রিট আবেদনে আইনের আশ্রয় নেন। আবেদনকারী এসব সদস্যকে ৬০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। সেই রায়ের সার্টিফাইড কপি সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পৌঁছেছে।