Updates :
Loading...

বিসিএস এ টিকে থাকতে হলে যা যা করতে হবে লিখেছেন সুশান্ত পাল



বন্ধুরা!
যারা বিসিএস পরীক্ষা দেবেন, প্রস্তুতিপর্বে তাদের প্রথমেই যেখানে পরিবর্তনটা আনতে হবে সেটা হলো মাইন্ডসেটে। পরীক্ষার ধরণ বদলে গেছে, এর মানে, পরীক্ষার ধরণ আপনার সাথে যারা পরীক্ষা দেবে, সবার জন্যই বদলে গেছে। আপনি এখানে ইউনিক কেউ নন। আগের পরীক্ষাগুলি সহজ ছিল, এর মানে কিন্তু এ-ই নয় যে, আগের পরীক্ষাগুলি দিয়ে যারা চাকরি পেয়েছেন, তারা আপনার চাইতে কম মেধাবী। পরীক্ষার ধরণের ওপর ওদের কোনো হাত ছিল না। এখনকার মতো পরীক্ষা হলে ওরাও নিজেদেরকে ওভাবে করেই প্রস্তুত করতো। কাউকে আপনার চাইতে অযোগ্য বলার আগে উনার সাথে প্রতিযোগিতা করে উনাকে হারিয়ে দিয়ে এরপর বলুন। আপনার নিজেকে যোগ্য বলার আগে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেখান কাজে, মুখে নয়। মুখে কোনো কিছু বলে ফেলার জন্য কোনো বাড়তি যোগ্যতা লাগে না, শুধু কথা বলতে জানলেই হয়।

প্রস্তুতি নিচ্ছেন, অথচ সেটা ঠিকমতো কাজে লাগছে না। কেন? আপনার প্রস্তুতির ধরণ ঠিক নেই। নিজে যা করছেন, সেটা হয়তো ঠিক, কিন্তু যথেষ্ট নাও হতে পারে। নোকিয়া কোম্পানি সবকিছুই ঠিকঠাক করছিলো, কাজে কোনো ফাঁকি ছিল না, ওদের প্রোডাক্টের কোয়ালিটিও ভাল ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও বন্ধ হয়ে গেল। কেন? ওরা যে পদ্ধতিতে ব্যবসা করছিলো, সেটাকে বদলানোর, প্রোডাক্টকে আপডেট করার সময় এসে গিয়েছিলো, কিন্তু ওরা সেটা না করেই ওদের মতো করে ব্যবসা করে যাচ্ছিলো। ওদের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান, তারা তো আর বসে নেই! অন্যরা যখন পরিবর্তনকে সহজে গ্রহণ করছিল, তখন ওরা পুরোনোকেই আঁকড়ে ধরে বসেছিল। শুধু ঠিক কাজটি করাটাই বড় কথা নয়, দেখতে হবে সে ঠিক কাজটি করা কতটুকু দরকার। আপনি কেমন, সেটা আপনি নিজেকে কেমন ভাবেন, সে ভাবনা নির্ধারণ করে দেয় না। আপনি আসলেই কেমন, সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। নিজের কাছে সবারই নিজেকে সেরা মনে হয়, অন্য কারোর চাইতে ভাল মনে হয়। সেটা আপনাকে কিছু বোকা আত্মতৃপ্তি ছাড়া আর কিছুই দেবে না। আপনি যেমন ছিলেন, তেমনই থেকে যাবেন। আপনি নিজেকে কী ভাবেন, সেটা কেউই কেয়ার করে না। আপনি আসলে কী, সেটাই অন্যরা দেখে। আপনার মূল্যায়ন আপনার কাজের মাধ্যমে, আপনার ভাবনার মাধ্যমে নয়। মুখে মুখে কিংবা মনে মনে হাতিঘোড়া মেরে কী লাভ? নিজের কল্পনার রাজ্যে সবাইই তো রাজা।


আপনি যা যা পারেন না, তা তা পারা দরকার কিনা, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি দরকার হয়, তবে সেসবকিছু কীভাবে পারতে হয়, সেটা নিয়ে ভাবুন। একটা কাগজে লিখে ফেলুন, আপনার কোন কোন দুর্বলতা আপনাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে নিজেকে বিন্দুমাত্রও ছাড় দেয়া যাবে না। আপনি ওটা পারেন না, এটা কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো, ওটা আপনার পারা দরকার কিন্তু পারার জন্য আপনি কোনো বুদ্ধি বের করছেন না, সেটা। যারা বিসিএস ক্যাডার হতে পারে আর যারা পারে না, তাদের মধ্যে পার্থক্য বেশি নয়। তিন জায়গাতে পার্থক্য আছে বলে মনে হয়। এক। প্রস্তুতি নেয়ার ধরণে। দুই। পরীক্ষা দেয়ার ধরণে। তিন। ভাগ্যে। আপনি তৃতীয়টাতে বিশ্বাস করেন না? আচ্ছা ঠিক আছে, বিসিএস পরীক্ষা দিন, বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন। যেকোনো পরীক্ষায় ভাল করার ৪টি বুদ্ধি আছে: পরিশ্রম কী নিয়ে করবো, পরিশ্রম কেন করবো, পরিশ্রম কীভাবে করবো—এই ৩টি জেনেবুঝে সঠিকভাবে কঠোর পরিশ্রম করা। বিসিএস পরীক্ষা দেশের সবচাইতে কঠিন পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় ভাল করতে বুদ্ধিমত্তা কিংবা মেধার চাইতে পরিশ্রমের মূল্য বহুগুণে বেশি। বুদ্ধিমত্তা বড়োজোর আপনি কীভাবে করে সবচাইতে ভালভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন, সেটা ঠিক করে দিতে পারে। কিন্তু আসল কাজটাই হল কিছু নির্ঘুম রাতকাটানো অক্লান্ত পরিশ্রমের।

আপনি সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত যে বিষয়ে আপনি এখনও সফল হতে পারেননি, সে বিষয়ে কোনো কথাই বলবেন না, চুপচাপ কাজ করে যাবেন, চূড়ান্ত সাফল্য আসার পর কথা বলবেন। অবশ্য, সাফল্য আসার পর কথা বলতেও হয় না। সাফল্য নিজেই অনেক জোরে কথা বলতে পারে! আপনি সফল হওয়ার পর, আপনি কীভাবে সফল হলেন, সেটা অন্যরা নিজ দায়িত্বেই জেনে নেবে, আপনাকে নিজ থেকে কিছুই বলতে হবে না। আমার কাছে মনে হয়, মুখ বন্ধ রেখে কাজ করলে আপনার কাজটা সহজ হবে। কোনো বিষয়ে বলার মতো অবস্থান তৈরি না হলে সে বিষয়ে না বলাই ভাল। আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে কীভাবে অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় ভাল করা যায়, আমি বলি, “জানি না”। কারণ সেটা আমি জানি কিংবা না জানি, আমার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট বলে দেয়, সেটা নিয়ে বলার কোনো যোগ্যতা আমার নেই। অনার্স-মাস্টার্সে সেকেন্ড ক্লাস পাওয়া স্টুডেন্ট ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ার বুদ্ধি দেবে কীভাবে? আপনি যা নিয়ে বাহবা পাওয়ার যোগ্য নন, তা নিয়ে মিথ্যে বাহবা শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে কখনোই প্রকৃত বাহবা পাবেন না।
বড় পরীক্ষায় ভাল করার জন্য অন্ধের মতো খাটলে বেশি একটা ভাল রেজাল্ট করা যায় বলে মনে হয় না। কারোর প্রিপারেশন টেকনিক ফলো করার আগে এটা অন্তত ১০ বার ভেবে নিন, উনি ফলো করার মতন কিনা। আপনার প্রতিদিনের পারফরম্যান্স যেন আগেরদিনের চাইতে ভাল হয়, এটা মাথায় রেখে কাজ করবেন। পরীক্ষায় নতুন নতুন নানান বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, এর মানে হল, আপনাকেও প্রস্তুতির ধরণে নতুনত্ব আনতে হবে। আপনার আগে কেউ কম পড়ে পার পেয়ে গেছে মানে কিছুতেই এটা নয় যে, আপনিও কম পড়ে পার পেয়ে যাবেনই!

প্রতিটি পরীক্ষাতেই কিছু কিছু দিক থাকে যেগুলি নিয়ে কেউই আগে থেকে কিছু বলতে পারে না। ওই ব্যাপারগুলিকে যে যত সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবে, তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। আপনাকে কোনো বিষয়েই অনেক পণ্ডিত হতে হবে না। যেটা করতে হবে সেটা হল, সব বিষয়েরই বিভিন্ন বেসিকগুলি ভালোভাবে জানতে হবে। এক্ষেত্রে যে যত বেশি জেনে নিতে পারবে, প্রতিযোগিতায় সে তত বেশি এগিয়ে থাকবে। যে প্রশ্নগুলির উত্তর বেশিরভাগ ক্যান্ডিডেটই জানে না, সেগুলির উত্তর আপনি জানার অর্থ হলো, আপনি বেশিরভাগের চাইতে এগিয়ে আছেন এবং পরীক্ষার পর এই অজুহাত দেখাতে হবে না যে ‘প্রশ্ন কঠিন ছিল, তাই পারিনি’। যে উত্তর করতে পারে না, সে-ই বলে প্রশ্ন কঠিন। যেমন, আমার কাছে অনার্সের পরীক্ষাগুলির প্রায় সব প্রশ্নই কঠিন ছিল কারণ আমি প্রায় প্রশ্নেরই উত্তর পারতাম না। বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা বাড়ান। পড়ার অভ্যাস না বাড়ালে এটি সম্ভব নয়। যে বেশি বই পড়ে, তার ভেতরে এক ধরণের শক্তি তৈরি হয়। সেই শক্তিই তাকে অন্যদের চাইতে অনেকদূর এগিয়ে রাখে। রিডিং হ্যাবিটের চাইতে বড় ঐশ্বর্য কমই আছে। ভাল বই এবং লেখা পড়লে, ভাল মুভি দেখলে, ভাল জায়গায় ঘুরতে গেলে আপনার ভাবনার উন্নতি ঘটবে। এতে আপনার লেখার মান অন্যদের চাইতে ভাল হবে। আপনাকে কেন অন্যদের চাইতে বেশি মার্কস দেয়া হবে যদি আপনিও অন্যদের মতোই হন? আপনি আপনার বন্ধুর চাইতে প্রতিদিন ৩০ মিনিট কম ঘুমালেই আপনার বন্ধুর চাইতে ৩ বছর আগে চাকরিটা পাবেন। এটাই বাস্তবতা।
অনেকেই ইংরেজি নভেল পড়তে পারেন না। এক্ষেত্রে দুই ধরণের লোক দেখা যায়। বেশিরভাগই পড়তে পারেন না বলে পড়া শুরু করেন না। কেউ কেউ পড়তে শেখার জন্য সহজ ভাষায় লেখা একটি নভেল নিয়ে পড়া শুরু করেন; হোক সেটি হ্যারি পটার সিরিজ, তবুও। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধরণের লোকেরা প্রথম ধরণের লোকের চাইতে এগিয়ে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। আমরা গরীব বলেই ধনীদের এই ভাষাটি আমাদের শিখতে হয়। যে যত ভালভাবে এটা শিখতে পারে, সে তত ধনীদের মতো, অতএব, যোগ্য, এটাই দেশ ও সমাজ ধরে নেয়। যা-ই পড়েন না কেন, পড়ার সময় দুটো ব্যাপার মাথায় রেখে পড়বেন। এক। লেখক কী বলতে চাচ্ছেন। দুই। আপনি লিখলে কী লিখতেন। এতে আপনার সৃজনশীল ক্ষমতা, মানে লেখার ক্ষমতা বাড়বে। প্রচুর পড়তে হবে, যা পড়েছেন তা থেকে কী শিখলেন সেটা বুঝতে হবে, যা শিখলেন তা কাজে লাগাতে হবে। শেখার সময় জেনে শিখতে হবে, যা শিখছেন তা শেখার আদৌ কোনো দরকার আছে কিনা। ফালতু জিনিস শেখার চাইতে সেই সময়ে ঘুমানোও ভাল।

বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করার জন্য যে চাকরিটা আপাতত করছেন, সেটা ছাড়ার কোনো দরকার নাই। অনেকসময়ই সেটা ছেড়ে দেয়া মানে, আপনার ফ্যামিলিকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। আমাদের কলিগদের অনেকেই সিভিল সার্ভিসে আসার আগে অন্য চাকরিতে ছিলেন। আপনি চাকরি ছাড়বেন তখনই যখন আপনি বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাবেন। এর আগ পর্যন্ত চাকরিটা ধরে রাখুন। আমি অনেককেই দেখেছি চাকরি ছেড়ে দেয়ার ফলে যে সুবিধেটা হয়েছে, সেটা হল ঘুমানোর সময়টা আগের চাইতে বেড়ে গেছে। সামনে সময় কম? একটু ভাবুন তো, সময়টা কি শুধু আপনার জন্যই কম? আপনি আগে পড়েননি? ভাল কথা, এখন কম ঘুমান। পড়তে না পারার পেছনে আপনার হাতে হাজারটা কারণ থাকতে পারে, কিন্তু সেইসব কারণের দাম আপনার কাছে অনেক হলেও পুরো দুনিয়ার কাছে তার কানাকড়িও দাম নেই।
সাফল্যের কোনো অজুহাত লাগে না, সব অজুহাতই শুধুই ব্যর্থতার। ব্যর্থতা কী? ব্যর্থতা হল এমন কোনোকিছু করতে না পারা যা আমি করতে চাইছি। কিংবা, এমন কোনোকিছুতে ব্যর্থ হওয়া, যার বদলে এর চাইতে ভালকিছু করা যায় না। আমি ব্যবসায় ব্যর্থ হলেও সেটাকে আমি ব্যর্থতা মনে করি না, কারণ আমি ব্যবসাকে বড় করে দেখিনি। আমার জীবনে আমি কোনটাকে প্রাধান্য দেবো, সেটা সম্পূর্ণই আমার নিজস্ব ব্যাপার। যদি সেটাতে অসফল হই, তবেই আমি ব্যর্থ, এর আগ পর্যন্ত না। তাই কেউ যদি ব্যবসা করে গাড়িবাড়ি করে ফেলে, সেটা আমাকে একটুও বিচলিত করে না, ঈর্ষান্বিত করে না। আমি খুব হাসিমুখেই উনার সফলতাকে উদযাপন করতে পারি। আমি যা করছি, সেটাতে আমার পক্ষে যতটুকু যাওয়া সম্ভব, আমি ততটুকু যেতে পারলাম কিনা, আমি যা করতে ভালোবাসি তা নিজের মতো করে করতে পারছি কিনা, এসবই আমাকে ভাবায়। আমি সিভিল সার্ভিসে আছি, যিনি এই সার্ভিসে নেই তার অবস্থানটা যদি বিচার করতেই হয়, তবে তার নিজের ক্ষেত্রটা বিবেচনায় এনেই তাকে বিচার করা উচিত। তবে সবচাইতে ভাল পন্থা হল, কারোর অবস্থানকেই বিচার না করে নিজেরটা নিয়ে নিজের মতো করে থাকা। বেশিরভাগ অসুখী মানুষই ভীষণ জাজমেন্টাল হয়ে থাকেন।
আপনি কোথায় পড়াশোনা করছেন সেটা কোনো ব্যাপারই না। যদি কেউ সেটা নিয়ে কিছু বলে, তবে দয়া করে ওর মূর্খতাকে নিজগুণে ক্ষমা করে দিন। আপনি যে অবস্থানে আছেন, সেটা আপনার অতীতের কাজের ফল। একইভাবে, আপনি ভবিষ্যতে যে অবস্থানে থাকবেন, সেটা আপনার বর্তমানের কাজের ফল। আগেও ফাঁকি দিয়েছেন, এখনও ফাঁকি দিচ্ছেন, এর মানে হল, ভবিষ্যতটাও ফাঁকির ফলাফলস্বরূপ খুবই বাজেভাবে কাটার কথা। এটা মেনে নিতে পারলে অবশ্য ফাঁকি দিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারেন। সেটাও একদিক দিয়ে খারাপ না। আপনার পরিশ্রম করার ধরণ দেখে যারা হাহাহিহি করবে, তাদেরকে দেখে আপনিও নিশ্চিন্তে নিঃশব্দে হাহাহিহি করতে পারেন, কারণ তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে যে তারা আপনার চাইতে পিছিয়ে থাকবে। যারা ভূতের মতো খাটে, তাদেরকে আমরা পাগল বলি। আমি দেখেছি, এ পৃথিবীতে পাগলরাই সবসময় এগিয়ে থাকে।

প্রতিদিনই পড়তে বসুন। দুএকদিন পড়া বাদ যেতে পারে, সেটাকে পরেরদিন বেশি পড়ে পুষিয়ে নিন। বিসিএস পরীক্ষা মৌসুমি পড়ুয়াদের জন্য নয়। পড়ার সময় অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলি বাদ দিয়ে পড়বেন। কোন কোন বিষয়গুলি অপ্রয়োজনীয়? এটা বোঝার জন্য অনেক অনেক বেশি করে প্রশ্নের ধরণ নিয়ে পড়াশোনা করুন। সমজাতীয় পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে ভালভাবে ঘাঁটাঘাঁটি না করে বিসিএস পরীক্ষার ভাল প্রস্তুতি নিতে পারবেন না। রেফারেন্স বই পড়বেন, তবে বইয়ের সবকিছু পড়তে যাবেন না। বিসিএস পরীক্ষা বেশি জানার পরীক্ষা নয়, বরং যা দরকার তা জানার পরীক্ষা। সবকিছু পড়লে পণ্ডিত হবেন, বুঝেশুনে পড়লে ক্যাডার হবেন। বেকার পণ্ডিত অপেক্ষা চাকরিজীবী গর্দভ উত্তম। পছন্দ আপনার! প্রচুর প্রচুর প্রশ্ন পড়ুন। গাইড বইয়ে, প্রশ্নব্যাংকে, মডেল টেস্টের গাইডে, যেখানেই প্রশ্ন পান না কেন। ৪টা নতুন রেফারেন্স বই পড়ার চাইতেও ২টা পুরোনো গাইড বই রিভিশন দেয়া কিংবা ১টা নতুন গাইড বই পড়ে শেষ করা অনেকবেশি কাজের।

হাতের লেখার ক্ষেত্রে দুটো ব্যাপার মাথায় রাখবেন। যাতে পড়া যায় এবং যাতে অনেক দ্রুত হয়। সুন্দর হাতের লেখার গুরুত্ব আছে, তবে হাতের সুন্দর কিন্তু স্লো, কিছু প্রশ্ন বাদ পড়ে যায়, কিংবা দুএকটি উত্তর মনের মতো লেখা যায় না, ওরকম সুন্দর হাতের লেখার কোনোই দাম নেই। বাংলা কিংবা ইংরেজি, যেকোনোটিতেই উত্তর করতে পারেন। আপনার লেখার স্টাইল, প্রেজেন্টেশন, নতুনত্ব, প্রাসঙ্গিকতা, পরিধি, এসব ঠিক রাখলেই হলো। তবে একটা ব্যাপার বলে নিই। আমি নিজে প্রথম প্রথম ইংরেজিতে পরীক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইংরেজিতেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছিলাম। পরে দেখলাম, ভালভাবে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বইপত্র, স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস পাচ্ছি না। তখন বাংলায় প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। আঁকার জন্য পেন্সিল আর কোটেশন দেয়ার জন্য নীল কালির কলম ব্যবহার করতে পারেন। লেখার চর্চা না থাকলে পরীক্ষার হলে সেটা হাওয়া থেকে আসবে না। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং প্র্যাকটিস করুন। হোক ফেসবুকে, তাতেও কোনো সমস্যা নাই। বরং ওটা আরও ভাল। বন্ধুদের কমেন্টের রিপ্লাই দিতে গিয়েও ভাষার অনেক খুঁটিনাটি শেখা যায়। যেকোনো দরকারি বিষয় নিয়ে থামতে বলার আগ পর্যন্ত লেখার দক্ষতা অর্জন করুন। কীভাবে ভাল লেখা যায়? পড়ার অভ্যাস বাড়িয়ে ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখে। এসব কাজ শুরু করার জন্য বেশি গবেষণার কিছু নেই। শুরু করে দিলেই পারবেন। অতিভাবনা ও অতিপণ্ডিতি প্রিপারেশনকে নষ্ট করে দেয়।

পড়াশোনাটা প্রথম থেকেই শুরু করুন। যদি তা না করেন, তাহলে যে সময়ে অন্যরা রিভিশন দেবে, সে সময়ে আপনাকে নতুন জিনিস পড়তে হবে। পড়ার সময় এবং খাতায় লেখার সময় মাথায় রাখবেন, প্রশ্নের শুরুটা এবং শেষটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুটা এমনভাবে করুন, যাতে আপনার উত্তরটা পড়তে ইচ্ছে করে, আর শেষটা এমনভাবে করুন যাতে আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতা সম্পর্কে পরীক্ষকের মনে ইতিবাচক ধারণা জন্মে। কী বলতে যাচ্ছেন, সেটা নিয়ে শুরুতেই আভাস দেবেন, আর শেষে এসে এতক্ষণ কী লিখলেন, সেটা নিয়ে নিজের মতামত দেবেন। ইংরেজির ক্ষেত্রে সহজ স্টাইলে নির্ভুলভাবে লেখার চেষ্টা করুন। ভাল ইংরেজি লিখতে ভাল ভোকাবুলারি লাগে না, পণ্ডিতি ফলানোর লেখার স্টাইলও জানতে হয় না। শুধু বানানে ভুল করবেন না, গ্রামারে ভুল করবেন না। প্রাসঙ্গিকভাবে লিখে যান। ব্যস্! মার্কস আসবেই আসবে!

লেখার চর্চা থাকলেই লেখা যায়। বিসিএস পরীক্ষা স্পেশালিষ্টদের পরীক্ষা নয়, জেনারেলিস্টদের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় ভাল করতে হলে অল্প জিনিস নিয়ে বেশি বেশি জানার চাইতে বেশি জিনিস নিয়ে অল্প অল্প জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক এবং বিরোধপূর্ণ ইস্যু নিয়ে না লেখাই ভাল। দেশ কিংবা সরকারকে ছোট করে দেখায়, এমন একটা বর্ণও খাতায় লিখবেন না। খাতায় ডাটা, চিত্র, ম্যাপ, টেবিল, ফ্লোচার্ট, কোটেশন, নানান রেফারেন্স, সংবিধান থেকে উদ্ধৃতি, ইত্যাদি যত বেশি দেবেন, আপনার মার্কস তত বাড়বে। আগে থেকে পড়াশোনা না করলে এসবকিছু খাতায় দেয়াটা অনেকটাই অসম্ভব। ইন্টারনেটে টপিক সার্চ করে করে পড়াটা খুব খুব কাজের। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রতিদিনই একটা বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয়কে ইংরেজিতে এবং ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয়কে বাংলায় অনুবাদ করুন। ইংরেজি সম্পাদকীয়টিকে অনুবাদ করার পাশাপাশি সামারাইজও করে ফেলবেন। এরপর সে টপিক নিয়ে নিজে এক পৃষ্ঠা লিখবেন। যত কষ্টই হোক না কেন, এই কাজটি না করে কোনোভাবেই ঘুমাতে যাবেন না। শব্দের অর্থ কাউকেই জিজ্ঞেস করবেন না, নিজে ডিকশনারি খুঁজে খুঁজে বের করবেন। অনলাইনে দেশিবিদেশি পত্রিকার আর্টিকেল এবং বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইটগুলিতে নিয়মিত ঢুঁ মারুন। খুবই কাজে দেবে। টিভি-রেডিও’র সংবাদ নিয়মিত শুনলে কম পরিশ্রমে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস মনে রাখতে পারবেন। সবকিছু পড়বেন না, সবকিছু শুনবেন না। অতো বাজে সময় নেই। যা যা পরীক্ষায় কাজে লাগে, শুধু সেগুলির সাথেই থাকুন। পেপার পড়ার সময় সামনের পাতা, সম্পাদকীয় পাতা, আর্টিকেলসমূহ, সংবাদ বিশ্লেষণ, কেস স্টাডি, ব্যবসাবাণিজ্য, আন্তর্জাতিক নানান ইস্যু, ইত্যাদি ভালভাবে পড়বেন। মাঝেমাঝে এসব পড়ে পড়ে নিজে কিছু লেখার চেষ্টা করতে পারেন, কাজে দেবে। পেপার পড়তে প্রতিদিন ১.৫-২ ঘণ্টার বেশি ব্যয় করার দরকার নেই। পুরো পেপারে যা যা বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়, শুধু তা-ই পড়বেন। অনলাইনে পেপার পড়া সবচাইতে ভাল। এটি সময় বাঁচায়।
কারোর সাজেশনস ফলো করবেন না। নিজের সাজেশনস নিজেই তৈরি করুন। অ্যাড-রিমুভ, এডিট করে অন্তত ৪-৫ সেট। এজন্য আগের বছরের প্রশ্ন, বিভিন্ন গাইডের সাজেশনস, এবং নিজের আইকিউকে কাজে লাগান। পরীক্ষার হলে বড় প্রশ্ন লেখার সময় প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড কিংবা কিফ্রেইস ঠিক করে করে সেগুলিকে বিশ্লেষণ করে লিখুন। এভাবে করে লিখলে অনেক আইডিয়া আসবে লেখার। প্রস্তুতি নেয়ার সময় কোনো উত্তরই মুখস্থ করার দরকার নেই। কারণ সে প্রশ্নটি পরীক্ষায় নাও আসতে পারে আর মুখস্থ করতে গিয়ে যে সময়টা নষ্ট হবে, সে সময়ে আরও ৪টা ভিন্ন প্রশ্ন কিংবা আরও ৪টা বই থেকে একই প্রশ্নটিই পড়ে নেয়া সম্ভব। এটাই বেশি ফলপ্রসূ। যত বেশি সোর্স থেকে পড়বেন, তত বেশি বানিয়ে লিখতে পারবেন। কোনটা কোন সোর্স থেকে পড়ছেন, সেটা একটা নোটবুকে প্রশ্নের পাশে পাশে লিখে রাখুন। রিভিশন দেয়ার সময় খুব কাজে লাগবে। কোন কোন অংশে বুদ্ধি করে পড়লে গড়পড়তার চাইতে বেশি মার্কস তোলা সম্ভব, সেগুলিকে চিহ্নিত করে সেগুলির উপর বেশি জোর দিন। কম্পিটিশনে আসতে চাইলে কম্পিটিশনে আসার ক্ষেত্রগুলি কী কী, সেটা তো আগে জানতে হবে, তাই না?
এটা ঠিক যে, সবচাইতে ভালটা প্রথমবারেই পাওয়া যায়! মেধাতালিকায় থাকা প্রথম ১০ জনের বেশিরভাগই প্রথমবারে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সফল-হওয়া ক্যান্ডিডেট। তবুও যারা প্রথমবারের মতো বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছেন না, তারা এটা কখনোই মাথায় আনবেন না যে আপনার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। বরং এটা মাথায় রাখুন, যদি সামনেরবারও চাকরিটা না পান, তবে অন্তত আরও এক বছর নষ্ট হবে। বিসিএস পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথমদিকে থাকা অনেকেরই প্রথম বিসিএস-এ হয়নি। যদি আপনিও ওরকম প্রথমদিকে থাকতে পারেন, তবে আপনার এই যন্ত্রণা অনেকটাই চলে যাবে। সেই চেষ্টাই করুন। আমার কাছে তো মনে হয়, প্রত্যেকটি বিসিএস-ই আপনার জন্য প্রথম বিসিএস। কীরকম? আপনি যদি ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, তবে সেটিই তো আপনার জন্য প্রথম, কারণ এর আগে আপনি কখনোই ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষা দেননি। বিসিএস পরীক্ষা চুম্বনের মতো। প্রতিটি চুম্বনই প্রথম চুম্বন, প্রতিটি বিসিএস-ই প্রথম বিসিএস। একইভাবে দ্বিতীয়বার চুমু খাওয়া সম্ভব নয়, একইভাবে দ্বিতীয়বার বিসিএস পরীক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। অনেকেই প্রথমবারে প্রিলিই পাস করতে পারল না, আর পরেরবারে গিয়ে মেধাতালিকায় স্থান করে নিল। এমন দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি আছে। সবকিছুই নির্ভর করে নিজের ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য, আর পরিশ্রমের উপর।
আপনার সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিদিন কত সময় পড়াশোনা করবেন, সেটা ঠিক করে নিন। এখানে সক্ষমতা বলতে আমি বোঝাতে চাইছি, ৮০% মানসিক সক্ষমতা আর ২০% শারীরিক সক্ষমতা। আমার নিজেরটাই বলি। আমি প্রতিদিন ১৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করার সময় বেঁধে দিয়েছিলাম এবং যতদিন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম, এই ১৫ ঘণ্টার নিয়মটি খুব স্ট্রিক্টলি ফলো করতাম। ১৫ ঘণ্টা মানে কিন্তু ১৪ ঘণ্টা ৬০ সেকেন্ড, এর কম কিছুতেই না। কখনো কখনো সময়টা এর চাইতে বেড়ে যেত, কিন্তু অসুস্থ হয়ে না পড়লে কমানো যাবে না, এটাই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। এতে আমার যে লাভটি হয়েছে, সেটি হলো, শেষ মুহূর্তের বাড়তি চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছি। স্নায়বিক চাপের ফলে অনেকেরই ভাল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা খারাপ হয়ে যায়। অতিরিক্ত চাপ আত্মবিশ্বাসও কমিয়ে দেয়, যেটা ভীষণ আত্মঘাতী। অনেকেই হয়তো এর চাইতে কম সময় পড়ে ম্যানেজ করতে পেরেছেন। এটা নির্ভর যার যার পড়ার ধরণ এবং বেসিকের উপর। আমি খুব মেধাবী কখনোই ছিলাম না বলে আমাকে বেশি সময় ধরে পড়তে হয়েছে। যতক্ষণই পড়াশোনা করুন না কেন, কোয়ান্টিটি স্টাডির চাইতে কোয়ালিটি স্টাডিই বেশি দরকার। যে সময়টাতে পড়াশোনা করছেন, নিজের ১০০%ই দিয়ে পড়াশোনা করুন। সপ্তাহের শেষ দিনে ৪-৫ ঘণ্টা আগের ৬ দিনে যা যা পড়েছেন, সেগুলি খুব দ্রুততার সাথে একবার রিভিশন দিন। কোনো পড়া প্রথমবার পড়ার সময় প্রয়োজনীয় এবং কঠিন অংশগুলি অবশ্যই রঙিন কালিতে দাগিয়ে দাগিয়ে পড়বেন।
 
কোচিং সেন্টারে যাওয়া ঠিক কিনা, এটা আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেন। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, কোচিং সেন্টারে যাওয়া যাবে যদি আপনি ওদের সব কথাকেই অন্ধভাবে বিশ্বাস না করেন। আপনাকে খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে, আপনার কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়। ওদের কথা শোনার সময় এটা ধরে ফেলতে হবে কোন কোন কথা স্রেফ কোচিং সেন্টারে স্টুডেন্টের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বলা। ওদের গৎবাঁধা ছকে চললে আপনি হয়তোবা ক্যাডার হতে পারবেন, কিন্তু খুব ভাল করতে পারবেন না। এর চাইতে ভাল বিভিন্ন গাইড বই, রেফারেন্স বই, ইন্টারনেট আর পেপার থেকে পড়াশোনা করা। কোচিং সেন্টারে যেতে পারেন যদি আপনি নিজের ব্যক্তিগত পড়াশোনাকে ঠিক রেখে ওদের পরামর্শকে বুঝেশুনে ফলো করতে পারেন। কীরকম? ধরুন, পরেরদিন কোচিং-এ মডেল টেস্ট। এর জন্য আগেরদিন কিছুতেই আপনার ব্যক্তিগত পড়াশোনাকে ব্যাহত করা যাবে না। প্রয়োজনে এর জন্য এক্সট্রা আওয়ার খাটতে হবে। তাতে কোচিং-এর পরীক্ষায় মার্কস কম পেলেও অসুবিধা নেই। আমি কোচিং সেন্টারে টপারদেরকে বিসিএস পরীক্ষায় টপার হতে খুব একটা দেখিনি। আপনি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হবেন নিজের মনটাকে খুঁতখুঁত করা থেকে বাঁচানোর জন্য, নিজেকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ভালভাবে প্রস্তুত করার জন্য, সব ক্লাস করে পয়সা উশুল করার জন্য নয়। কোচিং সেন্টারের সব ক্লাস করার চাইতে বোকামি আর হয় না। অনেক ছেলেই কোচিং সেন্টারে প্রতিদিন যায় সুন্দরী মেয়ে দেখার জন্য আর অনেক মেয়েই যায় ছেলেদের পয়সায় শিঙাড়া খাওয়ার জন্য। চাকরি নাই, অথচ ফুটানির শেষ নাই। নিজের সাথে এর চাইতে বড় ফাঁকিবাজি আর হয় না। আপনি কোচিং সেন্টারে যাবেন কীভাবে শুরু করবেন সেটা বুঝতে, কিছু টেকনিক শিখতে, মডেল টেস্টগুলি নিয়মিত দিতে আর আপনার অবস্থানটা জানতে। পড়াশোনার ব্যাপারটা সম্পূর্ণই নিজের উপর নির্ভর করে।
বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করার ক্ষেত্রে অন্য কারোর পরামর্শ অনুসরণ না করে নিজের মতো করে গুছিয়ে পড়াশোনা করাটাই সবচাইতে ভাল। তবে একথা মাথায় রাখলে সুবিধা, চাকরির পরীক্ষায় ভাল করা আর অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় ভাল করার টেকনিকগুলিতে অসংখ্য অমিল রয়েছে। আমি কয়েকজন অনার্স এবং মাস্টার্সে টপারকে বিসিএস প্রিলিতেই ফেল করতে দেখেছি। আরেকটা জিনিস সবসময়ই মাথায় রাখুন। সেটি হলো, কখনোই বিসিএস নিয়ে বেশি লোকের সাথে কথা বলবেন না, আলাপ-পরামর্শ করতে যাবেন না। শুধু যারা এ পরীক্ষায় সফল হয়েছেন, তাদের সাথেই এটা নিয়ে কথা বলুন। তেমন কাউকে পাওয়া না গেলে কারোর সাথেই কোনো কথা বলার দরকার নেই। বিসিএস ক্যাডারের সাথে বকবক করলে আর বিসিএস ক্যাডারের বকবকানি শুনলেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায় না। পদ্ধতিগতভাবে পড়াশোনা করে যান, নিজের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখুন, জয় আপনার হবেই হবে!

কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করছে:
এক। আপনার ভালথাকাটা কারোর না কারোর স্বপ্ন। এই ভালমানুষটিকে ভাল রাখতে হলেও ভাল থাকুন।
দুই। আপনি পরীক্ষায় খারাপ করলে কেউ না কেউ অনেক শান্তি পাবে। আর কিছু না হোক, শুধু উনাকে অশান্তিতে রাখতে হলেও পরীক্ষায় ভাল করুন।
তিন। আপনি ভাল একটা অবস্থানে যেতে পারলে আপনার জন্য আপনার বাবা-মা, কাছের মানুষগুলি সম্মানিত হবেন। তাদেরকে গর্বিত করতে ভাল করে পড়াশোনা করুন।
চার। আপনি যে অক্লান্ত পরিশ্রমটা করে যাচ্ছেন, সেটা নিয়ে যাতে কেউ হাসাহাসি করতে না পারে, সেটার জন্য হলেও চাকরিটা পেয়েই দেখান।
পাঁচ। আপনার সামর্থ্য নিয়ে আপনার আশেপাশের যে মূর্খরা আজেবাজে বকছে, তাদেরকে সমুচিত জবাবটা আপনার কাজের মাধ্যমে দিয়ে দিন! সত্যি বলছি, অনেকবেশিই স্বস্তি পাবেন।
সব কথার শেষকথাটি: বিসিএস প্রিলি, রিটেন, ভাইভা নিয়ে আমার অন্তত ৩০+টি লেখা আছে যেগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছিলো। লেখাগুলির সবকটিই আমার ফেসবুক নোটসে পাবেন। আমার সব নোটই পাবলিক-করা, তাই আমার বন্ধু-তালিকায় থাকুন আর না-ই থাকুন, পড়তে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন। আমার এই লেখাটির বাইরে প্রয়োজনীয় অনেককিছুই ওগুলিতে পেয়ে যাবেন।
গুড লাক!!

Share This Post

Related Articles

Previous
Next Post »