Updates :
Loading...

এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে আরও ১ লাখ ২ হাজার ৬৭৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী নতুন নিয়োগ হচ্ছে


মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের ব্যবস্থা ছাড়াই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এমপিও নীতিমালার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে সরকার। প্রস্তাবিত খসড়ায় বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষকদের এমফিল-পিএইচডির মতো উচ্চতর শিক্ষার জন্য কোনো প্রণোদনার সুযোগ রাখা হয়নি। অনার্স-মাস্টার্স কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা নেই। এবারও ৯ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিও না দেয়ার তালিকায় রাখা হয়েছে।


তবে বিদ্যমান এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আলাদা পদ সৃষ্টির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সহকারী গ্রন্থাগারিক এবং এমএলএসএস পদ সৃষ্টির প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত আছে। এতে সারা দেশে এমপিওভুক্ত প্রায় ২৮ হাজার প্রতিষ্ঠানে দেড় লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরির সংস্থান হবে।


শনিবার অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদের সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত এমপিও নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে অতিরিক্ত সচিব যুগান্তরকে বলেন, নীতিমালার খসড়া তৈরির পর সংশ্লিষ্টদের মত নেয়া হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করার জন্য খুব শিগগিরই বৈঠক বসবে।


দেশে বর্তমানে প্রায় ৩৯০টি বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিষয়ে অনার্স চালু করতে কমপক্ষে ৭ শিক্ষক লাগবে। অনার্স ও মাস্টার্সের জন্য কমপক্ষে ১২ জন লাগবে। এসব শিক্ষকের কাউকেই সরকার এমপিও দেয় না। প্রস্তাবিত নীতিমালাতেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষককে এমপিও’র বাইরে রাখা হয়েছে। ফলে অতীতের মতো আগামীতেও কলেজ থেকে প্রাপ্ত অর্থই তাদের সংসার চালাতে হবে। কঠিন বাস্তবতায় যোগ্য শিক্ষকরা এ ধরনের কলেজ-মাদ্রাসায় চাকরির আগ্রহ হারাবেন। ফলে অধিকাংশ বেসরকারি কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।


দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা বলেছেন, বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স কলেজের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেয়ার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানই অঙ্গীকারবদ্ধ। ভবিষ্যতে সার্বিক অগ্রগতির জন্য অনার্স-মাস্টার্স কলেজে এমপিও দিতে আমরা অনুরোধ করব। পাশাপাশি শিক্ষার অন্য স্তরেও যেসব শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও পান না, সেসব ক্ষেত্রেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।


রাজধানীর শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের সহকারী অধ্যাপক বদরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সরকার মানসম্মত শিক্ষা চায়। কিন্তু সরকারি হাইস্কুল আর বেসরকারি হাইস্কুল থেকে মাস্টার্স কলেজ পর্যন্ত শিক্ষকদের উচ্চতর শিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অথচ সরকারি কলেজে এ জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা আছে। আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও গত বছর তাও উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা মানসম্মত শিক্ষার পীঠে কুঠারাঘাতের শামিল। তিনি মনে করেন, ডিগ্রি স্তরে তৃতীয় শিক্ষক এবং অনার্স-মাস্টার্সে এমপিও দেয়া উচিত। নইলে এসব প্রোগ্রাম ও শিক্ষক নিয়োগ সরকারের বন্ধ করে দেয়া উচিত হবে।


মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন বলেন, উচ্চতর শিক্ষার জন্য কেবল সরকারি কলেজে প্রণোদনা আছে। এ ক্ষেত্রে উচচ্চশিক্ষা স্তরে প্রথম শ্রেণী থাকলে একটি ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়। এমফিলের জন্য ২টি এবং পিএইচডির জন্য ৩টি ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা আছে।


শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি পর্যায়ের মোট ১১ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিও’র জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৬ হাজার ৯০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তিন লাখ ৬০ হাজার ৬৪৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। আর কর্মচারী রয়েছেন প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৭৪ জন। সব মিলিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ ৬৬ হাজার জন।


অপরদিকে প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন পদ সৃষ্টির কারণে উল্লিখিত ২৬ হাজার ৯০টি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে আরও ১ লাখ ২ হাজার ৬৭৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী নতুন নিয়োগ করা হবে। ইতিপূর্বে বাংলা, ইংরেজি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য নিু মাধ্যমিক স্কুলে ১ জন শিক্ষক নিয়োগ করা যেত। নতুন প্রস্তাবে এ তিন বিষয়ের জন্য তিনজন শিক্ষক নিয়োগের কথা আছে। আবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে বাংলা, ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার জন্য ৩ জন শিক্ষক পাওয়া যেত। এখানে আরও ১ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাড়তি এ শিক্ষক হবেন ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের। বিদ্যমান নীতিমালায় ৬টি শর্ত পূরণ করে এমপিও পেতে হয়। এগুলো হল : প্রাপ্যতা, স্বীকৃতি/অধিভুক্তি, জনবল কাঠামো পূরণ, কাম্য শিক্ষার্থী ও ফলাফল, ব্যবস্থাপনা কমিটি। এ ছয়টির মধ্যে এমপিওপ্রত্যাশী প্রতিষ্ঠানকে বর্তমানে ৫০ ভাগ শিক্ষার্থীকে পাস করাতে হয়। এটা ৭০ ভাগ করা হবে।


ইতিপূর্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে এবং দাখিল ও আলিম পর্যায়ের মাদ্রাসায় বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন ১ জন। তিনিই পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যা ও উচ্চতর গণিত পড়াতেন। এর ফলে পাঠদানে জটিলতা হতো। নতুন প্রস্তাবে ভৌতবিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞানের জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। গণিত বিষয়ের জন্য আলাদা শিক্ষক দেয়া হবে। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রভাষকদের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২৫ জন করে শিক্ষার্থী থাকতে হয়। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এ শর্ত শিথিল করে ১৫ জন করা হয়েছে।


প্রস্তাবিত খসড়ায়, ইবতেদায়ি সংযুক্ত দাখিল, আলিম ও ফাজিল মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষায় ২ জন করে শিক্ষকের জায়গায় ৪ জন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিষয়ে ১ জন করে পাবে। সেই হিসাবে ব্যবসায় শিক্ষা চালু না থাকলে এ বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। মাধ্যমিক সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন থেকে জুনিয়র শিক্ষকের পরিবর্তে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে এনটিআরসিএ’র (সরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ) মাধ্যমে। ৪ জন শিক্ষক দেয়া হবে।


মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে প্রথমবারের মতো শারীরিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং চারু ও কারুকলা বিষয় প্রবর্তন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ইতিপূর্বে শরীরচর্চা শিক্ষক যারা ছিলেন তারা শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে গণ্য হবেন। আর বাকি দু’বিষয়ের জন্য শিক্ষক দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে।


এর বাইরে স্কুল ও মাদ্রাসায় কৃষি এবং গার্হস্থ্য বিষয়ে অভিন্ন না হলেও একই শিক্ষককে পড়াতে হতো। নতুন নীতিমালায় গার্হস্থ্য বিষয়ের জন্য আলাদা শিক্ষকের প্রস্তাব আছে। মাদ্রাসায় দাখিল-আলিমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের জন্য শিক্ষক দেয়া হবে। শিক্ষকের পাশাপাশি দাখিল মাদ্রাসায় ১ জন করে সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার এবং স্কুল-মাদ্রাসায় এমএলএসএস পদ বাড়ানোর প্রস্তাব আছে।


বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ) শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিও প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নির্দেশিকা শীর্ষক এ নীতিমালা প্রথমে ১৯৯৫ সালে প্রণীত হয়। ২০১০ ও ২০১৩ সালে এটি দু’দফায় সংশোধিত হয়েছে।

Share This Post

Related Articles

Previous
Next Post »