সংকট দূর করতে এবার বিসিএস উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়। মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, মাউশির প্রস্তাব পাওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে ‘কোয়েরি’ (তথ্যানুসন্ধান) এবং নিয়োগবিধি চেয়ে ফিরতি চিঠি দেয়া হয়। মাউশি থেকে তার জবাব পাওয়া গেছে। এখন এ নিয়ে কাজ চলছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দেয়ার একটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে গেছে। এসব পদ প্রথম শ্রেণীর হওয়ায় পিএসসির মাধ্যমে পদোন্নতি দিতে হবে। কিন্তু অনেকেরই যোগ্যতা পূরণ হচ্ছে না। এ কারণে শর্ত প্রমার্জনের জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। ফাইল বঙ্গভবন থেকে ফিরলে পরবর্তী প্রক্রিয়া নিতে তা পিএসসিতে পাঠানো হবে।
জানা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে ৩৩৩টি সরকারি হাইস্কুল আছে। এতে সহকারী শিক্ষকের পদ আছে ১০ হাজার ৬টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০৩টি পদই শূন্য। প্রধান শিক্ষকের পদ আছে মাত্র ৩২৪টি। বাকি ৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়নি। এই ৩২৪টির মধ্যে ৮৪টি প্রধান শিক্ষকের পদ খালি আছে। আর সহকারী প্রধান শিক্ষকের ৪৫৭টি পদের মধ্যে ৩৬৭টি খালি আছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকারি হাইস্কুলে চার বছর ধরে কোনো শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে না। ২০১২ সালের মে মাসে সরকার এসব স্কুলের সহকারী শিক্ষকের পদ তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। এ বাস্তবতায় এসব শিক্ষক নিয়োগে নতুন নিয়োগবিধি প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু নিয়োগবিধি চূড়ান্ত করে এখনও পিএসসিকে দেয়া যায়নি। একটি নিয়োগবিধির খসড়া করে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলেও পড়ে আছে সচিব কমিটিতে। ফলে পিএসসি নতুন কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া নিতে পারেনি। এ কারণে দিন দিন সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদ সংখ্যা বাড়ছে।
মাউশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩৩৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ হাজার ৬টি পদ আছে। এর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ১ হাজার ৭০৩টি সহকারী শিক্ষকের পদই ফাঁকা। শূন্যপদের মধ্যে বাংলায় ২৭২, ইংরেজিতে ২৭২ ও গণিতে ২০৪টি আছে। ইসলাম ধর্মে ফাঁকা ১৩৯টি পদ। সামাজিক বিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষায় ১৩৬টি করে পদ খালি। ভূগোল, কৃষিশিক্ষা এবং চারু ও কারুকলা বিষয়ের ৬৮টি করে পদ শূন্য।
রাজধানীর একটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, অন্যান্য বিষয়ের ক্লাস যে কোনো শিক্ষককে দিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু পদ শূন্য থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে।
জানা যায়, মাউশির পাঠানো প্রস্তাবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু কোনো ক্যাডারের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হননি, এমন প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে এ ধরনের প্রার্থীদের বিভিন্ন নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।