Updates :
Error Loading Feed!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে দেবে নতুন ছন্দ (কপিল দেব)


ক্রিকেটের যেকোনো সংস্করণে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই রোমাঞ্চ। প্রবল উৎসাহ, আকাশচুম্বী প্রত্যাশা, উত্তেজনা—কোনো কিছুরই কমতি থাকে না। দুই দলের খেলোয়াড়েরা চেষ্টা করেন নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিতে এবং এটি এমন এক ম্যাচ যাতে শেষ বলটা হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুই বলা যায় না। যেকোনো টুর্নামেন্টে এটি একটা বড় আকর্ষণ এবং আজ রাতে ইডেন গার্ডেনে আরও একবার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে দেবে নতুন ছন্দ।
ক্রিকেটপ্রেমীরাও এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছেন। কারণ এই ম্যাচের ফল এই গ্রুপেও বড় ভূমিকা রাখবে। নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে ভারত অবশ্যই চাপে আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশকে হারিয়ে পাকিস্তান মানসিকভাবে বেশ চাঙা, ওই ম্যাচে শহীদ আফ্রিদিও ব্যাটিংয়ে তার বিধ্বংসী রূপটা দেখিয়েছে। ওর ফর্মে ফেরাটা পাকিস্তানের জন্য দারুণ ব্যাপার। ভারতকে অবশ্যই তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
খেলোয়াড় হিসেবে আমার অভিষেকও হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে, ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে। ওই সফর নিয়ে আমার দারুণ কিছু স্মৃতি আছে। মাজিদ খান, সাদিক মোহাম্মদ, জহির আব্বাস, আসিফ ইকবাল, মুশতাক মোহাম্মদ, সরফরাজ নওয়াজ ও জাভেদ মিয়াঁদাদের মতো খেলোয়াড়দের বিপক্ষে খেলাটা ছিল আসলেই বড় চ্যালেঞ্জ। সুনীল গাভাস্কার, মহিন্দর অমরনাথ, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, এরাপল্লী প্রসন্ন ও বিষেন সিংয়ের মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করাটাও ছিল দারুণ ব্যাপার। ওই সফরে পাকিস্তানেরই আধিপত্য ছিল। তবে আমার সবচেয়ে বেশি মনে থাকবে শাহিওয়াল ওয়ানডে ম্যাচটির কথা।
কোয়েটা ও শিয়ালকোটে প্রথম দুটি ওয়ানডে শেষে সিরিজে ১-১ সমতা। শাহিওয়ালে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আমাদের জয়ের খুব কাছাকাছি মুহূর্তে পাকিস্তান এমন এক কৌশল নিল, যাতে আমরা খুবই মর্মাহত হলাম। পাকিস্তানের বোলাররা একের পর এক বাউন্সার দিতে থাকলেন, যেগুলো বিশ্বনাথের মাথার অনেক ওপর দিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু আম্পায়াররা ওয়াইড ডাকলেন না। ব্যাটসম্যান প্রতিবাদ জানালেন। কিন্তু হাস্যকরভাবে আম্পায়ারদের পক্ষ থেকে বলা হলো, বিশ্বনাথ খাটো বলেই নাকি বল নাগালে পাচ্ছেন না! প্রতিবাদে আমরা মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে এলাম এবং ম্যাচে পাকিস্তানকে বিজয়ী দেখানো হলো। ওই তিক্ত সফরের পরের সিরিজেই আমরা পাকিস্তানকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছিলাম ঘরের মাঠে।
সত্তর ও আশির দশকে পাকিস্তান দুর্দান্ত একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল ছিল। ওরা সেই সামর্থ্য অর্জন করেছিল দেশের মাটিতে টেনিস বলের ক্রিকেট খেলে খেলে। আমাদের খেলোয়াড় আসত মূলত মুম্বাই থেকে। কিন্তু ১৯৮৩ বিশ্বকাপের পর পুরো ছবিটা বদলে যেতে লাগল। সারা দেশ থেকে খেলোয়াড় উঠে আসতে লাগল এবং দলটা অনেক লড়াকু হয়ে উঠল। ওই ধারাবাহিকতা এখনো আছে, এখনো বড় শহরের পাশাপাশি ছোট শহরগুলো থেকে ক্রিকেটার আসছে। পাকিস্তানে এটা ছিল অনেক আগে থেকেই।
আশির দশকে ভারত-পাকিস্তান লড়াই বড় আকর্ষণ হয়ে গেল এবং তখন দুই দল নিয়মিত মুখোমুখিও হতো। ১৯৮৪ সালে প্রথম এশিয়া কাপে শারজায় ভারত হারাল পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্রিকেটে ভারতীয় আধিপত্যের সেই শুরু, যা অব্যাহত ছিল ১৯৮৫ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও। আমরা দুবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হলাম এবং সহজেই জিতলাম। আমার এখনো মেলবোর্নের ফাইনালটার কথা মনে আছে। শিবরামাকৃষ্ণনের লেগ স্পিনে ওই ম্যাচটা প্রায় একতরফা হয়ে গিয়েছিল, সুনীল গাভাস্কার দুর্দান্ত রানআউট করলেন ইমরান খানকে। অধিনায়ক হিসেবে ওটা ছিল গাভাস্কারের শেষ ম্যাচ।
বছরের পর বছর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এমন বিনোদন দিয়ে আসছে। মুখোমুখি লড়াইয়ে আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাটা ছিল। আবার এমনও গেছে, যখন আমরা দীর্ঘদিন মুখোমুখি হইনি। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত দীর্ঘ এক দশক ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজ খেলেনি। এখনো তো প্রায় এক দশক ধরে দ্বিপাক্ষিক সিরিজটা বন্ধ আছে।
তবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের বৈশ্বিক আবেদন অসাধারণ। সারা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরাই চায় এই দুটি দেশ আরও মুখোমুখি হোক। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আমিরাতে হোক, এটা আমি চাই না। আমি চাই ভারত ও পাকিস্তানেই হোক। অবশ্য এই দুই দেশের ক্রিকেটে মুখোমুখি হওয়াটা অন্য অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এবং সেগুলো ঠিক করে সরকার। ভারত-পাকিস্তান খেলার ব্যাপার আমি সব সময় আমার সরকারি নীতির সমর্থক। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দ্বৈরথও আছে, তবে সেটি ভারত-পাকিস্তানের মতো নয়। যদি দুই দেশের সীমান্তে সমস্যা থাকে, আমিও পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নিয়ে স্বস্তি বোধ করব না। তরুণ পাকিস্তানি ক্রিকেটার যারা ভারতে খেলতে চায় তাদের জন্য আমার সহমর্মিতা আছে, কিন্তু কিছু কিছু বিষয় সরকারের হাতেই ছেড়ে দেওয়া ভালো।
দর্শকে ঠাসা ইডেন গার্ডেন নিশ্চয়ই আরও একটা জমজমাট ম্যাচ উপহার দেবে। জসপ্রীত বুমরার বিপক্ষে শহীদ আফ্রিদি কেমন খেলে, মোহাম্মদ ইরফানের বাউন্সার বিরাট কোহলি কীভাবে সামলায়—সবকিছু দেখাটা হবে আনন্দদায়ক। ধর্মশালায় এই ম্যাচটা হচ্ছে না বলে সেখানকার দর্শকদের জন্য আমার খারাপ লাগছে। কিন্তু এটাও সত্যি, ম্যাচটা বিশ্ব ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী এক ভেন্যুতেই ফিরে এসেছে। আরাম করে বসুন এবং জমজমাট এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকুন। (পিচ সলিউশন)

Share This Post

Related Articles

Previous
Next Post »

:)
:(
hihi
:-)
:D
=D
:-d
;(
;-(
@-)
:P
:o
:>)
(o)
:p
:-?
(p)
:-s
(m)
8-)
:-t
:-b
b-(
:-#
=p~
$-)
(y)
(f)
x-)
(k)
(h)
cheer