. গ্রন্থ সমালোচনায় কাজে দিবে
ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক উপন্যাস:- আরেক ফাল্গুন
লেখকঃ জহির রায়হান(১৯৩৫- ১৯৭২)
রিভিউ :-
by > পবন চৌধুরী
============
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত এই বই আরেক ফাল্গুন। ভাষা আন্দোলন আমাদের অস্তিত্বের আন্দোলন। স্বাধিকারের আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের সফলতা দিয়েই মূলত আমরা স্বাধীন হওয়ার পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছিলাম। এই ভাষা আন্দোলনকে উপলক্ষ্য করে যে কয়টি উপন্যাস রচিত তার মাঝে জহির রায়হানের আরেক ফাল্গুন একটি মাস্টারপিস। বইটিতে ঠিক ১৯৫২ সালের কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে তার দুবছর পরবর্তী সময়ের কথা। রক্তের মধ্যে তখন উত্তেজনা, আকাশে বাতাসে রফিক, সফিক, জব্বারের লাশের গন্ধ তখনো ভাসছে। ভাষার জন্যে জীবন দান করেছেন যারা তাদের আত্মত্যাগ এর কোন মূল্যায়নই হয়নি। তখনো রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃতি পাইনি। পুলিশের দমন পীড়ন নীতি জোরদার ভাবে চলছে। এখনো তারা মায়ের ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে চায়না। বেয়নেটের আঘাতে দমিয়ে রাখতে চায় সংগ্রামী চেতনাকে। ভাষা আন্দোলনের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত তরুন সমাজ কাঠ, শোলা দিয়ে শহীদ মিনার নির্মান করে ভাষা শহীদদের সম্মান জানানোর জন্য। সেই শহীদ মিনার কেও গুড়িয়ে ফেলা হয় স্বৈরাচারী শাসনের কঠিন পদতলে। তখন সেই সংগ্রামী যুব সমাজ মাঠে নেমে এসে। গল্পের শুরুটা অনেকটা এইভাবে, সাদা জামা সাদা প্যান্ট, হাতে বই খাতা। খালি পায়ে যুবকটি চলছে নিঃশব্দে। হঠাৎ দেখায় তাকে পাগল বলে মনে হতে পারে। তড়িঘড়ি করে কোথায় যেন চলছে। কিছুক্ষন পর একজন থেকে দশজন হল তারপর বিশজন, সবার খালি পা। মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে একটি মেয়ে আসছে গায়ে এপ্রন, হাতে স্টেথোস্কোপ, ডাক্তার হবে হয়তো, তারও পা খালি। সব কলেজ, ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে নেমে এসেছে। পিছু হটার কোন পথ নেই। এখনই সময়, নয়তো আর কখনোই নয়। খালি পায়ে চলছে একঝাক তরুন তরুনী। তাদের দাবি একটাই ভাষা শহীদদের সম্মান জানাতে হবে, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করতে হবে। বায়ান্ন পরবর্তী তরুনসমাজের তখনকার চিত্র গুলো এভাবেই ফুটে উঠেছে বইটিতে। যারা বিভিন্ন উপায়ে শান্তিপূর্ন ভাবে আন্দোলন করে যেতে থাকে, প্রতিবাদ করে যেতে থাকে তাদের দাবি আদায়ের জন্য। কিন্তু তার মাঝে কোন হিংস্রতা নেই, আছে শুধু নিঃশব্দ আকুতি এবং রাজপথ না ছাড়ার দৃঢ় প্রত্যয়। বইটির শেষের দিকে দারুন একটা দৃশ্যপট আছে, যেখানে শয়ে শয়ে তরুন তরুনীকে জেলে ভরে রাখা হয়। এদের সংখ্যা দেখে জেলার বিরক্ত হয়ে ওঠে। তখন তাদের মধ্যে থেকে একজন বলে ওঠে, “এই দেখেই অতিষ্ঠ হয়ে গেলেন, আসছে ফাল্গুন আমরা তো দ্বিগুন হব”। ফাল্গুনের পর ফাল্গুন যেন ভরে উঠবে পুলিশ স্টেশন গুলো, একটাই দাবিতে তা হলো অস্তিত্বের দাবি।
Courtesy: Zakir's BCS specials